৪১ বছরে জমালেন ৫০ লাখ, দান করলেন সব টাকা

দান করা একটি অতি মহৎ কাজ। দান করলে আল্লাহর কাছ থেকে পরকালে কী কী প্রতিদান পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘যারা দিন-রাত প্রকাশ্যে ও গোপনে তাদের ধন-সম্পদ দান করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে।

কখনও নাশতা খরচ আবার কখনও গাড়ি ভাড়া বাঁচিয়ে টাকা জমিয়েছেন টিনের কৌটায়। এক টাকা, দুই টাকা কখনও ১০০ টাকা। ৪১ বছরে জমানো টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ। পবিত্র রজমান মাসে ওই টাকা ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য দান করে অনন্য নজির স্থাপন করলেন ৮০ বছর বয়সী কাজী মোহাম্মদ আলী।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ফরহাদাবাদের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী থাকেন নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর হামজারবাগ এলাকায়। পৈতৃক বাড়ির একতলা ঘরে দুই ছেলে ও দুই পুত্রবধূ নিয়ে বসবাস করেন তিনি।

সম্প্রতি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ওয়াক্ফ হিসাব খুলে ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। সপ্তাহখানেক আগে পবিত্র রজমান মাসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওয়াক্ফ হিসাবের কাগজপত্র চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির কাছে হস্তান্তর করেন। ওয়াক্ফ হিসাবের মূল টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে পারবেন না মোহাম্মদ আলী বা তার স্বজন এমনকি রোগী কল্যাণ সমিতি।

কেবল বছর শেষে মুনাফা পাবে সমিতি। রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে মুনাফার টাকা তোলা যাবে। ওই টাকায় চিকিৎসা হবে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‌‘আমার নানা ক্যানসারে মারা গেছেন, আমার মা হোসনে আরা বেগম ক্যানসারে মারা গেছেন। আমার ছোট বোনের মেয়ে নাহিদা সোমাও ক্যানসারে মারা গেছে। এ নিয়ে আমার মনে একটা কষ্ট আছে। আমি যদি ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য কিছু করতে পারি, তাহলে আমার মনের কষ্ট দূর হবে। এজন্য মূলত টাকাটা জমিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার এসব টাকা ১৮ বছরের নিচে ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যয় হবে। কেননা আমি চিকিৎসকদের কাছে শুনেছি, শিশুদের ক্যানসার নিরাময়যোগ্য। যদি তারা ঠিকমতো ওষুধ ও চিকিৎসা পায় তাহলে সুস্থ হয়ে যায়। ক্যানসারের ওষুধ অনেক দামি। গরিব শিশুদের ক্ষেত্রে ক্যানসার চিকিৎসার ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তাই ১৮ বছরের নিচে ক্যানসার আক্রান্তদের ক্ষেত্রে টাকাটা ব্যয় করতে বলেছি। তারা যদি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে মা-বাবার কাছে ফিরে তাহলে আমার কষ্ট সার্থক হবে।’